রেজাউল করিম চৌধুরীঃ
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স অফ ট্যাক্স জাস্টিসের (জিএটিজে) অংশ হতে পেরে আজ আমি গর্বিত বোধ করছি। স্থানীয় এনজিওর একজন প্রতিনিধি হিসেবে হিসেবে সেখানো যোগ দিয়ে আমি সংস্থাটির বেড়ে উঠার একজন স্বাক্ষী। স্থানীয় এনজিওর প্রতিনিধি না হয়ে, আমি কোনও দাতাসংস্থা বা কোনও আন্তর্জাতিক এনজিওতে চাকরি করলে, এই জিএটিজে-র অংশ হতে পারতাম না, এই গর্বটাও আজ এভাবে অনুভব করতে পারতাম না। স্থানীয় এনজিওর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে আমি নিজেকে আসলেই সৌভাগ্যবান ও মর্যাদাবান মনে করতে পারছি। স্থানীয় এনজিওকে আমি ভিন্নভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি, অধিকার ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করে আমরা স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়ে এডভোকেসি, আন্দোলন করেছি। অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা বা ব্যক্তিত্ব আমাকে সহায়তা করেছে, কিন্তু তারা তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে কারণ আমি আমার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি এবং আমার সংগঠন একটি আত্মমর্যাদা নিয়ে টিকে থাকার ক্ষেত্রে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
নরওয়ের কয়েকজন সংসদ সদস্যের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে জিএটিজে এ বছর নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। জিএটিজে অবৈধ অর্থ পাচার, অন্যায্য কর ব্যবস্থা, সম্পদের সুষম বণ্টন ইত্যাদি বিষয়ে বিশ্বজুড়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে। আমি প্রথমে ২০১৮ পর্যন্ত এর আন্তর্জাতিক কমিটি এবং ২০১৯ পর্যন্ত এশিয়ান / টাএফজেএ কমিটির অংশ ছিলাম।
আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে, কারণ এখনো বাংলাদেশে আসা প্রতি ১ ডলার বৈদেশিক সহায়তার বিপরীতে ৯ ডলার করে অর্থ পাচার হয়ে যায়। আমি বাংলাদেশের সকল যুবক বন্ধুদেরকে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উচ্চ বেতনে চাকরি করার জন্য না ছুটে, বা উন্নয়ন সহায়তার ঔপনিবেশিকতা ও বর্ণবাদ সম্প্রসারণকারী কোনও সংস্থার নেহায়তই চাকরিজীবী হয়ে না থেকে, সংকীর্ণ উগ্র জাতীয়তাবাদে না ভুগে, স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সংযোগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জ্ঞান ভিত্তিক আন্দোলনের এই পথ অবলম্বন করার জন্য অহ্বান জানাই।
বিশেষত আমি আমার কক্সবাজার জেলার যুবকদের প্রতি অনুরোধ করব যে, আপনার বর্তমান উচ্চ বেতনের চাকরি নিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না, এটি ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে উপকৃত করতে পারে, কিন্তু বাস্তবে এটি আপনাকে আপনার স্বাভাবিক জীবন ও সমাজ থেকে বিচ্যুত করে ফেলবে। সর্বোপরি এটি মানবাধিকার, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় সুশীল সমাজভিত্তিক আন্দোলন গঠনে আপনার রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে ধ্বংস করে দেবে।
নিজের ভবিষ্যৎ নিজের নিয়ন্ত্রণেই রাখুন। আমাদের এই ভবিষ্যত গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সমতা এবং ন্যায়বিচারের জন্য। আত্মমর্যাদা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে এই আন্দোলন শুরু করুন। আপনি যদি না করেন তবে কে এটি শুরু করবে? এটি চ্যালেঞ্জিং, বিনিময়ে হয়ত এই মুহূর্তে তেমন কিছু পাওয়া যাবে না, কিন্তু অন্যরকম কাঙ্ক্ষিত একটি পৃথিবীও সম্ভব। সমাজ বদলের আন্দোলনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে, কেবল রাজনৈতিক দলই নয়, সমাজ বদলে নাগরিক সমাজ এখন খুব শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে। এমনকি আপনি কোনও সংস্থার অংশ না হলেও আপনার হাতে তথ্য প্রযুক্তির শক্তি রয়েছে। ব্যক্তি হিসেবে আপনি অন্যদের উদ্বুদ্ধ করতে পারেন।
বাংলাদেশে কর নায্যতা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য ধন্যবাদ জানাই আওয়াল ভাই, মনোয়ার ভাই, স্বপন ভাই, বদরুল ভাই, সাবরি ভাই, কামাল, বাবর ও রুমীসহ সবাইকে । আমাদের এই যাত্রা আবারও উজ্জীবিত হবে আশা করি। আমাদের পরামর্শদাতা এপিএমডিডি ফিলিপাইনে আমাদের কমরেড লিডি ন্যাকপিলকে সালাম জানাই।
রেজাউল করিম চৌধুরী
নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাস্ট।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।